ফয়সাল পারভেজ
জান্নাতুল মারজান পড়ে ক্লাস টু তে।করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় বাড়িতে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি থেমে নেই সাহিত্যের বই পড়া।গেল এক মাস আগে সদস্য হয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি মাগুরা শাখায়। ইতিমধ্যে বই পড়া শেষ করেছে ইউক্রেনের গল্প,উপেন্দ্র কিশোরের গুপি গাইন বাঘা ব্যাইন, সুকুমার রায়ের শিশুদের মজার গল্পসহ কয়েকটি ছড়ার বই।
মারজানের মত রয়েছে রাহা, মেঘলা,আকাশি ফারহান আবিদসহ অনেকে শিশু কিশোর। যারা নার্সারী থেকে দশম শ্রেনীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ।শুক্রবার বেলা ১১ টায় এই খুদে পাঠকেরা বই সংগ্রহ করছে মাগুরা হাসপাতলের পূর্ব পাশে নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে । এরা সবাই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সদস্য । দেশ বিদেশের বিভিন্ন ক্যাটাগরির সাহিত্যর বই খুব সহজে নিতে পারছে তারা ।
ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির শিশু গ্রাহকেরা বলছে,করোনার জন্য মাঝে বন্ধ ছিল বলে অনেক বই পড়তে পারিনি। ক্লাসের পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি গল্প,কবিতার বই তাদের খুব ভাল লাগে। এদের মধ্যে অনেকেই কয়েক বছর আগে সদস্য হয়েছে। তাদের বই পড়ার অভ্যাসটাও তাই অনেকদিনের।
এই লাইব্রেরিতে আছে জনপ্রিয় উপন্যাস,গল্পের বই,রম্য রচনা,ভ্রমণ কাহিনী,কবিতার বই,প্রবন্ধের বই,জীবনীগ্রন্থ থেকে শুরু করে ধর্ম,দর্শণ,বিজ্ঞান,ইতিহাস,সমাজতত্ত ইত্যাদি বিষয়ের উপর যাবতীয় বই। নাম মাত্র খরচে সদস্য হয়ে শিশুরা পেয়ে যাচ্ছে তাদরে উপযোগী বইগুলো। যেহেতু বাড়ির আশেপাশে বই নিয়ে গাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে তাই শিশুদের জন্য সহায়ক হয়েছে বই বেছে নিতে।
করোনাকালে মাগুরা জেলা সহ সারা দেশেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরী ( মার্চ থেকে জুলাই মাসের ৪ তারিখ) পযন্ত কার্যক্রম বন্ধ ছিল । এরপর ৯ জুলাই থেকে খূলে যায় বই পড়ার সম্ভার । প্রতিটি গ্রাহকের থেকে বই নেয়া-দেওয়া চলছে জীবানূনাশক স্প্রে করে । স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কার্যক্রম চলছে আগের মত করে। বলছিলেন মাগুরা ইউনিটের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি কার্যক্রমের কর্মকর্তা কে,এম মোশারফ হোসেন।
তিনি মাগুরার খবরকে বলেন,করোনার আগে নতুন গ্রাহকের হওয়ার সংখ্যার তুলনায় এখন কিছুটা কম । তবে শিশুদের ব্ই পড়ার আগ্রহ বেড়েছে। স্কুল কলেজে বন্ধ থাকার ফলে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সাহিত্য বিষয়ক বই নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। স্বাস্থ্য সতর্কতা বিবেচনা করে গ্রাহকেরা ইচ্ছা করলে ফোন করে বই নিতে পারছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিছূ নিয়মীত গ্রাহক বই সংগ্রহ করতে পারছে না। তবে ফোন দিলে আমরা তার বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।
মাগুরাতে মোট ৪০ টি স্পটে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির গাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে । তবে করোনার ভেতরে কার্যক্রম কেবল মাগুরা শহর কেন্দ্রিক ছিল। চলতি মাসে উপজেলা পর্যায়ে আবারো শুরু হয়েছে ।
এই লাইব্রেরিয়ান আরও জানান, সদস্য হতে নামমাত্র খরচে । প্রতি বার একটি করে বই নেয়া যাবে। পড়া শেষ হলে তা ফেরত দিয়ে অন্য সব পছন্দসয় বই নেয়া যাবে।বই পড়া নিয়ে হয় বিভিন্ন সময়ে হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। শিশুদের মানুষিক বিকাশে এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে সারা বাংলাদেশ ব্যাপি।
এমনিতে বই পড়ার অভ্যাসটি বর্তমান কমে যাচ্ছে। যে কোন বইয়ের দোকানে গেলে আগের মত গল্পের বই পাওয়া যায় না। বাচ্চারা তো স্মার্ট মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। গেমস আর ইউটিউবে তাদের শৈশব কাটছে। করোনার সময়ে বাড়িতে থাকার ফলে বাচ্চাদের এই আসক্তি আরও বেড়ে গিয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন। যার ফলে নানা বিধ শারীরিক সম্যস্যা হতে পারে বলে বিভিন্ন সময় স্বাস্ত্য বিশেষজ্ঞরা মতামত ও দিচ্ছেন । এর থেকে সাহিত্য বিষয়ক বই পড়ার দিকে মনযোগ নিলে তা হতে পারে শিশুর মানুষিক বিকাশে সব থেকে ভাল সহায়ক কার্যক্রম।